১৯ শে মার্চ ২০২০ মোট সংক্রমণ ১৯৮, ১৯শে এপ্রিল ১৭,৩০৫ অর্থাৎ প্রায় ৮৮ গুন। ১৩০ কোটির মতো মানুষের বাস এই ভারতবর্ষে। প্রথম মাসের হিসেব অনুযায়ী দেখলে দেখা যায় যে সাড়ে তিন থেকে চার মাস সময়েই ভারতের সমস্ত মানুষের নভেল করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে পড়ার কথা। কিন্তু তা হয় নি।
স্বাস্থ্য – স্বাস্থ পরিষেবা ক্ষেত্রের বিকাশ – অমিত গুপ্ত

১৯ শে মে ২০২০ তে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১,০৬,৪৮১ অর্থাৎ এপ্রিল মাসে মোট আক্রান্তের ৬.১৫ গুণ। আর এটাই হলো ভারতীয় দের করোনার বিরুদ্ধে জয়ের প্রথম সিঁড়ি। ১৯শে জুন সেই অনুপাত আরো কমে দাঁড়ায় ৩.৭২ গুণে। যদিও মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৩,৯৫,৮৩২। আর ১৯ শে জুলাই ২০২০ তে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১০,৭৮,৭৫৭ তে গিয়ে দাঁড়ালেও, সংখ্যাতত্ত্বের বিচারে কিন্তু আক্রান্তের সংখ্যা গত মাসের তুলনায় আরো কমে গিয়ে ২.৭৩ তে দাঁড়িয়েছে।। অর্থাৎ? স্বস্তির খবর।
স্বাস্থ্যঃ বেসরকারি হাসপাতালের নার্সরা দলবদ্ধ ভাবে রাজ্য ছাড়ছেন!
স্বস্তির খবর এই কারণেই যে মার্চ এপ্রিল অথবা মার্চ মে’র মধ্যেকার সময়ে যে গুণিতকের অনুপাত পাওয়া যাচ্ছে, সেই হারে সংক্রমণ বাড়লে আজ এই মুহুর্তে ভারতে হাহাকার পড়ে যাবার কথা অথচ ভারতীয় জনজীবনে তেমন একটা এফেক্ট দেখা যাচ্ছে না। এবং এই হারেই যদি আগামী কয়েক মাসে সংক্রমণ বাড়ে, সেই ক্ষেত্রেও ১৩০ কোটী ভারতীয়কে আক্রমণ করতে কোভিড ১৯ এর সময় লাগবে আরও ৭ মাস।

ইতিমধ্যেই কানাঘোসা শোনা যাচ্ছে যে আগস্ট মাসেই করোনার প্রতিষেধক আসছে ভারতীয় বাজারে। আর সেক্ষেত্রে যদি তা সুফল পায়, তবে তো বল্লে বল্লে। আর যদি তা নাও হয় এবং সমানুপাতিক গুণিতকে করোনার সংক্রমণ ভারতীয়দের হতে থাকে তাহলে কি দাঁড়াতে পারে আক্রান্তের সংখ্যা দেখে নেওয়া যাক –
২.৭৩ | ১,২০,৪৫,১৬,৩৭৯ | ফেব্রুয়ারী ২০২১ |
২.৭৩ | ৪৪,১৯,৭৭,৩২০ | জানুয়ারী ২০২১ |
২.৭৩ | ১৬,২১,৭৬,২৫১ | ডিসেম্বর ২০২০ |
২.৭৩ | ৫,৯৫,০৭,৮৮৭ | নভেম্বর ২০২০ |
২.৭৩ | ২,১৮,৩৫,৪৩৩ | অক্টোবর ২০২০ |
২.৭৩ | ৮০,১২,১৫০ | সেপ্টেম্বর ২০২০ |
২.৭৩ | ৩৯,৩৯,৯২৬ | আগস্ট ২০২০ |
২.৭৩ | ১০,৭৮,৭৫৭ | জুলাই ২০২০ |
৩.৭২ | ৩,৯৫,৮৩২ | জুন ২০২০ |
৬.১৫ | ১,০৬,৪৮১ | মে ২০২০ |
৮৭.৪০ | ১৭,৩০৫ | এপ্রিল ২০২০ |
১৯৮ | মার্চ ২০২০ |
উপরের অনুমান সম্পুর্ণ রুপেই বিগত কয়েক মাসের পরিস্থিতির বিচার করে। অর্থাৎ মার্চের একদম শেষদিকে সারা ভারতে ঘোষণা হয় লক ডাউন। কিন্তু চালু ছিল বিমান পরিসেবা। আর সাধারণ মানুষ ও প্রস্তুত ছিলেন না এইভাবে নিজেকে গৃহবন্দী করে ফেলতে। অনেক প্রতিকুলতা দেখা দিয়েছিল। লক ডাউন সত্ত্বেও জরুরী পরিসেবা, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যে স্বাভাবিক উপায়ে মানুষকে উপলব্ধ করানো ইত্যাদি ছিল সরকারের কাছে একটা বড় চ্যালেঞ্জ। আর তাই প্রথম মাসে প্রায় ৮৮ গুণ সংক্রমনের হার বাড়লেও পরের মাসে কিন্তু তা কমে আসে ৬ গুনে।
ততদিনে আমরাও নিজেদের গৃহবন্দী করতে শিখে গেছি। বেশীরভাগ মানুষই সরকারের আবেদনে সাড়া দিয়ে বাড়িয়েছেন সোশ্যাল ডিস্টেন্সিং। যত সময় বেড়েছে, তত কমেছে আক্রান্তের গ্রাফ। আর আমরা যদি আরও একটি বেশী সহযোগিতা করতে পারি আমাদের সমাজকে, তাহলে হয়ত করোনা সেভাবে ক্ষতি করতে পারবে না আমাদের। হিসেব বলছে, যদি সমান পরিস্থিতি চলতে থাকে আগামী কয়েক মাস, তাহলেও সম্পুর্ণ ভারতবাসীকে গ্রাস করতে করোনার আরও সময় লাগবে ৭ মাস।

আশ্চর্য জনক বিষয় গুলির মতো অন্যতম হলো কোভিড ১৯ এর অদ্ভুত পরিবর্তন। শুরুর দিকে যা লক্ষণ পাওয়া যাচ্ছিল, তার অনেকগুলোই আজ ইতিহাস। যারপরনায় হিমশিম খেতে হচ্ছে বিশ্ব ব্যাপী বিজ্ঞানীদের। টীকা / প্রতিষেধক আবিস্কারের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে এই ভাইরাস। ফ্রান্সের এক গর্ভযাত শিশুর শরীরে পাওয়া গেছে করোনার অস্তিত্ত্ব। ইটালী র ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছিল বয়স্ক মানুষের উপর বেশী আক্রমণ করছিল কোভিড। আবার ভারত – বাংলা দেশে কিন্তু তুলনামুলক কমবয়সীরাই আক্রান্তের দলে।
এই বিশ্বযুদ্ধের এক এবং অদ্বিতীয় নায়ক হিসেবে নভেল করোনা আধিপত্য বিস্তার করে থাকলেও খুব শীঘ্রই সে হার মানতে বাধ্য। বিশেষ করে ভারতবাসীর কাছে। আর তা শুধুই সময়ের অপেক্ষা। সেই জয় পেতে হলে আমাদের আরও একটু সাবধান হতে হবে। সামাজিক দুরত্ত্ব, প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না বেরোনো, মানষিক শক্তি বাড়ানো, অন্যকে এসব ব্যাপারে গাইড করা, সরকারি হেল্প লাইন বা ডাক্তার বাবুদের পরামর্শ মতো চলা ইত্যাদি হলো করোনার বিরুদ্ধে জয়লাভ করার অন্যতম অস্ত্র।