
ডিজিটাল ডেস্কঃ ভোরবেলা রাজ্যপাল ডঃ হরেন্দ্রকুমার মুখার্জী (Harendra Coomar Mookerjee) র হাঁটতে বেরোনোর অভ্যাস। এক শীতের সকালে রাজভবন থেকে বেরোতে গিয়ে তিনি দেখলেন লিফটম্যান সারা রাত ডিউটি করে লিফটের পাশেই ঘুমিয়ে পড়েছে।
এই দৃশ্যটি দেখে তিনি আবার ঘরে ফিরে গেলেন। ঘরে গিয়ে একটা শাল নিয়ে এসে লিফটম্যানের গায়ে জড়িয়ে দিয়ে প্রাতঃভ্রমণে বেরিয়ে গেলেন এই রাজ্যপাল। পরে লিফটম্যান ঘুমিয়ে পড়ার জন্য, রাজ্যপালের কাছে গিয়ে করোজোড়ে ক্ষমা চেয়ে শাল ফেরত দিতে গেলে তিনি সস্নেহে তাকে বলেছিলেন, “ছোট ভাইকে দেওয়া উপহার ফিরিয়ে নিতে নেই।
এই রাজ্যপাল তখন মাইনে পেতেন ৫০০০ টাকা। ৫০০ টাকা নিজের ও পরিবারের জন্য রেখে, বাকি অর্থ তিনি দুঃস্থদের এবং টিবি রোগীদের চিকিৎসায় দান করে দিতেন।
একবার রাজভবনের সব কর্মচারীদের তিনি ডাকলেন এক চায়ের নিমন্ত্রণে । সবাই শঙ্কিত। কর্মচারীদের মনে এক আশঙ্কা । কারণ তাঁরা সবাই জানত, ডঃ হরেন্দ্রকুমারের একটা 'বদভ্যাস' আছে। এই ধরণের চায়ের পার্টি ডেকে তিনি টাকা তোলেন, আর পরে সেই টাকা বিলিয়ে দেন সামাজিক উন্নয়নে।
এবারও তিনি কর্মচারীদের কাছে তেমন কোন চাঁদা না চেয়ে বসেন। চা-পর্ব শেষ হলে রাজ্যপাল চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন। হাত জোড় করে সকলের উদ্দেশ্যে বললেন, "আমি গরীব রাজ্যপাল। আদেশ করতে পারি না। বরং আপনাদের কাছে আমার একটা অনুরোধ আছে। আপনারা জানেন যে আমায় টিবি ফান্ডের খাতাপত্রের হিসেব রাখার জন্য একজন লোক রাখতে হয়েছে এবং তাকে মাইনে দিতে হয়। আপনারা যদি একটু ভাগাভাগি করে হিসেবপত্তরগুলো রাখার দায়িত্ব নেন, তাহলে মাইনের টাকাটা বেঁচে যায়। ওই টাকা দিয়ে বরং রোগীদের কিছু ফলমূল কিনে দিতে পারি।" শুনে তো সবার মাথা হেঁট। ওঁনার স্ত্রী-র নাম ছিল বঙ্গবালা। রাজভবনের কর্মীরা ওঁনাকে 'মা' বলে ডাকতেন।
রাজভবনের বিলাসব্যসন এই রাজ্যপাল শূন্যে নামিয়ে এনেছিলেন । যারা তখন রাজভবনের অতিথি হয়ে বাইরে থেকে এখানে আসতেন , সেই অতিথিদের কেউ কেউ দিল্লি ফিরে গিয়ে সরাসরি নেহেরুর কাছে নালিশ করতেন – রাজভবনের অতি সাধারণ আতিথেয়তা পেয়ে।
রাজভবন ছেড়ে চলে যাবার সময় রাজ্যপালের আতিথেয়তা ফান্ডে আট লক্ষ টাকা জমিয়ে রেখে গেছিলেন বাংলার গর্ব, প্রথম বাঙালি রাজ্যপাল ডঃ হরেন্দ্রকুমার মুখার্জী।