নির্মাল্য দাশগুপ্তঃ সময়টা ১৮৯৯, স্থানঃ মার্কিন মুলুকের নিউ ইয়র্ক। প্রবল পরাক্রান্ত জোসেফ পুলিৎজার তখন মার্কিন মুলুকের সংবাদপত্র দুনিয়ার অবিসম্বাদিত বাদশাহ। এমনই একটি সময় ঘটে যায় এক অবিস্মরণীয় ঘটনা। তখনকার দিনে সংবাদপত্র বিলির দায়িত্ব পালন করত বাচ্চা ছেলেরা।
হতদরিদ্র এই শিশু শ্রমিকরা নগদ পয়সায় সংবাদপত্র কিনে সারাদিন ধরে রাস্তায় রাস্তায় ফেরী করত। সেই সময় দিনের শেষে অবিক্রীত কাগজ ফেরত দেওয়ার কোন চল তো ছিল না উপরন্তু কমিশন হিসেবে যা পাওয়া যেত তা যৎসামান্যই। এই শিশুরা অধিকাংশই ছিল অনাথ অথবা পিতা-মাতা পরিত্যক্ত।
এদের কাঁধে ভর করে পুলিৎজারের ব্যবসা ফুলে ফেঁপে উঠতে লাগলো আর অন্যদিকে এই শিশু শ্রমিকদের অবস্থা দিন কে দিন খারাপ হতে লাগলো। একদিন, বঞ্চনার বিরুদ্ধে এই শিশুরা শুরু করলো আন্দোলন। তারা সংবাদপত্র নিতে অস্বীকার করলো। পুলিৎজারের নির্দেশে পুলিশ প্রশাসন শুরু করে দিল ব্যাপক ধরপাকড় কিন্তু তা সত্ত্বেও ওই শিশুদের আন্দোলন থেকে বিরত করা গেল না।
ইতিমধ্যে পুলিৎজারের বিরুদ্ধে জনমত তৈরি হতে শুরু করেছে কিন্তু তাতে তাঁর কোন হেলদোল দেখা গেল না। উনি সদর্পে ঘোষণা করলেন যে ওইসব ছেঁদো জনমতের তিনি তোয়াক্কা করেন না। তিনিই আসলে সরকার তৈরির কারিগর। তার কথাতেই মার্কিন জনগনক ঠিক করে কাকে ভোট দিয়ে জেতাতে হবে। আর এহেন লোকের বিরুদ্ধে জনমত? ছোঃ!
প্রসঙ্গত বলি, এই পুলিৎজারই কিন্তু পীত সাংবাদিকতারও জনক। অর্ধসত্য ও মিথ্যা কিভাবে সংবাদের মোড়কে পরিবেশন করতে হয় তা তিনিই প্রথম দেখিয়েছিলেন। সেই পুলিৎজারকেও ওই ছোট্ট শিশুদের কাছে শেষে নতজানু হতে হয়েছিল। শিশুদের সেই আন্দোলন হয়েছিল সফল।
এই বাংলায়ও বেশকিছু পুলিৎজারবাবু আছেন যারা মনে করেন যে তাদের কথাতেই এই পোড়া রাজ্যের বাসিন্দারা ভোট দেন, সরকার বানান আর সংবাদ হিসেবে ওরা যা পরিবেশন তাই বাংলার মানুষ দ্বিধাহীন বিশ্বাসে গলাধঃকরণ করেন!